ঢাকা, ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
১৩৮৮

#Public_washroom_for_women

মেয়েদের ইউরিন ইনফেকশন-কিডনি সমস্যা 

ডা. ফাহিমা জিন্নাত রিমি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৪৫ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশের অনেক মেয়ে ইউরিন ইনফেকশানে ভোগেন, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয় খুব অল্প বয়সেই। কারণটা কি কেউ জানে?
আমার মনে হয় জানে। কিন্তু যথাযথভাবে তেমন গুরুত্ব দেয় না।
কিছু বিষয়ে আসলে সত্যিকারের শক্ত মুভমেন্ট দরকার, দৃষ্টিভঙ্গি একদিক থেকে বদলাবো, অন্যদিকটা অন্ধকারে রেখে দিবো… এভাবে হয় না।
আমরা একটা ট্যুরে দূর্গম এলাকার ঝরণায় গেলাম। প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার হাঁটার পথ। ছেলেরা রওনা দেয়ার আগে পানি খাচ্ছেন, সাথে পানি নিচ্ছেন। আপনার মেয়ে বান্ধবীটি পানি খেলো না। তার ভয়, পথিমধ্যে যদি ওয়াশরুমে যেতে হয়?
আপনি নিজে যাওয়া-আসার মধ্যপথে তিনবার ইউরিনেট করলেন, কিন্তু মেয়েটা সেই সকাল ছয়টা থেকে রাত ৯ টায় বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়াশরুমে যেতে পারলো না। আপনি পথে হোটেলে, পাহাড়ের ঝোপে, যেখানে পারলেন প্রস্রাব করলেন। মেয়েটার সুযোগ নেই।
আমি খোলামেলাভাবেই বলছি। একটা মেয়ের ব্যবহার করার মতো পাবলিক ওয়াশরুম আমাদের শহরে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অথচ বিজনেস প্লেস, যেমন - হোটেল, রেস্তোরা বা অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান যাদের কাস্টমার বা ভোক্তাদের জন্য ওয়াশরুম আছে, সেখানে মহিলাদের জন্য অবশ্য অবশ্যই আলাদা ওয়াশরুম থাকতে হবে।
ঐ নিয়ম পর্যন্তই। কিন্তু বাস্তবে আছে কয়টিতে?
এই সমস্যা ঘরে ঘরে। রাস্তায় প্রস্রাব পাবার ভয়ে পানি কম খেয়েছে, এই ধরণের ঘটনা ঘটে নি, এই ধরণের কোন মেয়ে এইদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।
বরং পানি কম খেতে খেতে কিডনির মিসফাংশানিং, ইউরিন ইনফেকশন - এসব রোগে মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছে হরদম। দেখা যায় কেউ বাসায় বলে, আর কেউ কেউ না বলেই সহ্য করে যায় বছরের পর বছর !
সেইফ, ক্লিন এবং আলাদা ওয়াশরুম - এটা মেয়েদের প্রাপ্য। আমরা সত্যিই কি সেটা তাদেরকে দিচ্ছি? আমাদের সরকার প্রধান একজন নারী। তিনি নিশ্চয়ই শহরে শহরে মেয়েদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেট স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। 
আমাদের দিক থেকে কোন দাবী নেই। আমরা জেগে জেগে ঘুমাই। যেমন, নারী অধিকারে ব্যতিব্যস্ত নারীরা পিরিয়ড নিয়ে ট্যাবু ভাঙ্গার জন্য ফেসবুকে সরব। তারা পিরিয়ডের চেয়েও হালকা, সাবলীল এবং প্রাকৃতিক এই বিষয়টা নিয়ে কথা যদি বলতেন, মুভমেন্টে যেতেন, আমার সত্যি ভালো লাগতো।
পিরিয়ড মাতৃত্বের প্রতীক। কিন্তু একজন মা এইদেশে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে, অফিস, ব্যাংকে তার সন্তানকে স্তনদান করার ক্ষেত্রে পর্যন্ত যে প্রতিবন্ধকতার শিকার হন, নারী অধিকার কর্মীরা সেই সব ট্যাবু ভাঙ্গার ক্ষেত্রে নীরব কেনো?
বাংলাদেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের অপ্রতুলতার কারণে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়াল জেনিটাল ইনফেকশানের চেয়েও কি ইউরিন ইনফেকশানে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বেশি নয়?
দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো দারিদ্রসীমার নীচের মেয়েদের জন্য স্যানিটারী প্যাড সাশ্রয়ী করতে পারি নি। কিন্তু ওয়াশরুমের সমস্যায় দরিদ্র-বিত্তবান, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই'ই সমানভাবে ভিকটিম।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো নারীকে আমরা সব অধিকার দিতে চাই ঠিকই। তবে পিরিয়ড যেমন সেখানে ট্যাবু নয়, তারা সেখানে কিন্তু ঠিকই নারীর জন্য সমান সমান আলাদা পাবলিক ওয়াশরুম রেখেছে, নারীর স্তনদানে স্বাধীনতা রেখেছে।
আমরা কতোটা পিছিয়ে আছি, সেটা কি আমরা বুঝি?
চলুন। শেয়ার করি :  Let's Spread The Awareness ... Let's Ensure Women Their Deserving Privilege.
অন্তত রক্তাক্ত প্যাডের ছবি আপলোডের চেয়েও এটা বেশি দরকারি প্রজেক্ট।
সোস্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগের পাশে বসিয়ে দিন, লিখুন -
#Public_washroom_for_women
আপনাদের অধিকারের জন্য আপনারা কথা না বললে, কেউ দিবে না। I কেউ না।
আর প্রতিটা পুরুষ, আপনার মা, আপনোর বোন, আপনার স্ত্রী বা প্রেমিকা… কাউকেই যেন ইউরিন ইনফেকশান বা কিডনীজনিত সমস্যায় ভুগতে না হয়। দায়িত্ব কিন্তু আপনারও!